দৈনিকবার্তা-ঢাকা,৩ নভেম্বর: সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া সাজা বহাল রাখায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিকাষ্ঠে যেতে হবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে৷দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এ রায়ের মধ্য দিয়ে এই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো৷
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ কামারুজ্জামানের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এ রায় দেন৷বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি মো.আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী৷ সকাল নয়টা ১০ মিনিটে এজলাসে আসেন বেঞ্চের বিচারপতিরা৷ আসন গ্রহণের পর জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা কয়েক মিনিটে রায় ঘোষণা করেন৷ এদিকে,এ রায়ের পরে রিভিউ করার সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহাবুবে আলম৷রায় ঘোষণার পর সোমবার তার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি৷অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জেলকোর্ড অনুসারে জেলার তাকে আপিলের কথা জিজ্ঞাসা করতে পারেন৷ আর রায় কখন, কিভাবে কার্যকর হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া; রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছালে জেল কর্তৃপক্ষ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেবেন৷
তিনি বলেন, বিশেষ আইনে এ বিচার হচ্ছে৷ সাংবিধানিকভাবে এ আইন প্রটেকটেড৷ ১০৫ আর্টিকেল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলেছিলাম, এখনও তা বলছি৷ কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, আর রিভিউ চলবে না৷ রায় পাওয়ার পর বাস্তবায়ন পর্যন্ত মাঝের সময়টি জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের বিষয়৷অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, আসামিপক্ষের নানা ধরনের আবেদন থাকতে পারে৷ এসব আবেদনের কিছু আইনি ভিত্তি থাকতেও পারে, নাও পারে৷ এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই৷ অন্যদিকে, সময় সুযোগ পেলে রিভিউ আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম৷আপিলের রায় ঘোষণার পর সোমবার হাইকোর্টের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি৷তাজুল ইসলাম বলেন, কামারুজ্জামান ন্যায় বিচার পাননি, আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছিল৷ কিন্তু আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি৷
যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দিয়েছে তা মানতে হবে এ কথা উল্লেখ করে তাজুল আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী রিভিউ করার অধিকার আমাদের আছে৷ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর পূণর্বিবেচনার জন্য রিভিউ করা হবে৷ কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন৷ গত বছরের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল-২ তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেন৷ ট্রাইবু্যনালে তাঁর বিরুদ্ধে আনা সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪ ও ৭) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়৷ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে গত বছরের ৬ জুন আপিল করেন কামারুজ্জামান৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেনি৷ চলতি বছরের ৫ জুন থেকে আপিলের শুনানি শুরু হয়৷ ১৬তম দিনে ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষ হয়৷ ওই দিন আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন৷ এর এক মাস ১৬ দিনের মাথায় সোমবার কামারুজ্জামানের করা আপিলের রায় ঘোষণা করা হলো৷ এটি আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় রায়৷এদিকে, রায়ের প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম৷
কাশিমপুর কারাগারে ফাঁসির সেলে বন্দি যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামান আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় শুনেছেন রেডিওতে, যে রায়ে মৃতু্যদণ্ডই বহাল রয়েছে৷কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,খবর শুনে একাত্তরের এই বদর নেতা ছিলেন নির্বিকার; বাহ্যিক বা মানসিক পরিবর্তনও দেখা যায়নি৷যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড সোমবার বহাল রাখে আপিল বিভাগ৷ কাশিমপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন,গত বছরের মে মাসে ফাঁসির দণ্ড দেওয়ার পর থেকে এই কারাগারের চলি্লশ নম্বর ফাঁসির সেলে কয়েদির পোশাকে বন্দি রয়েছেন কামারুজ্জামান৷ নিজের কাছে থাকা রেডিওতে আপিল বিভাগের রায় শোনেন তিনি৷রায় শোনার পর বাহ্যিকভাবে তার মানসিক কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি৷ খাওয়া-দাওয়াসহ তার আচরণ স্বাভাবিক৷ তাকে বিচলিত মনে হয়নি৷ফাঁসির সেলে কেউ ইচ্ছা করলে এক ব্যান্ডের রেডিও রাখতে পারে বলেও জানান তিনি৷
এই কারা কর্মকর্তা জানান,ওই নিয়ম মেনেই তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি এক ব্যান্ডের রেডিও তার কক্ষে রাখতে দেওয়া হয়েছে৷যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ২০১১ সালের ২৪ জুন থেকে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান৷জাহাঙ্গীর কবির জানান, ফাঁসির দণ্ড পাওয়া কামারুজ্জামান ছাড়াও জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামসহ এ করাগারে মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত ১০৪ জন, যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া ৪৪১ জনসহ দুই হাজারের মতো বন্দি রয়েছেন৷ রিভিউ করবেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের দেয়া মৃতু্যদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে৷ সোমবার কামারুজ্জামানের আপিলের রায় প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্টেও সংশ্লিষ্ট শাখায় নোটিশটি পাঠানো হয়৷ মামলায় অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদিন এ নোটিশ পাঠান৷
একই সঙ্গে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন রিভিউ আবেদন দায়ের করার জন্য আপিল বিভাগের রায়ের সার্টিফাইড কপি পাওয়ারও আবেদন করেন৷রিভিউ আবেদনের নোটিশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী তাজুল ইসলাম৷ নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর বিধবাপল্লীতে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের দায়ে (তৃতীয় অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ এই অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত ও সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগ একমত হলেও সর্বোচ্চ সাজা মৃতু্যদণ্ড দেওয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে৷গোলাম মোস্তফাকে হত্যার দায়ে (চতুর্থ অভিযোগ) কামারুজ্জামানকে মৃতু্যদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ এই অভিযোগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃতু্যদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ৷দারাসহ ছয়জনকে হত্যার (সপ্তম অভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই দণ্ড বহাল রেখেছেন৷ একাত্তরে শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণের (দ্বিতীয় অভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এইদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ৷বদিউজ্জামানকে হত্যার (প্রথমঅভিযোগ) দায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ আপিলে এই অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি৷
রাজধানীর পল্লবী থানায় করা একটি মামলায় ২০১০ সালের ১৩ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ওই বছরের ২ অক্টোবর তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ ২০১২ সালের ৪ জুন ট্রাইবু্যনাল তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ গঠন করেন৷ ২ জুলাই এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়৷পাঁচ অভিযোগ: ট্রাইবু্যনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়৷এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪ ও ৭) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়৷এই পাঁচটিতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে আপিল করেন কামারুজ্জামান৷
প্রথম অভিযোগ (বদিউজ্জামান হত্যা): একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর সদস্যরা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে মো. ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগর সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়৷ সেখানে সারা রাত তাঁকে নির্যাতন করে পরদিন গুলি করে হত্যা করা হয়৷প্রথম অভিযোগে অপরাধের গভীরতা ও আনুপাতিকভাবে আসামির সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ তবে এই অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷
দ্বিতীয় অভিযোগ (সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণ): একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি এক বিকেলে কামারুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় নগ্ন করে শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করে৷দ্বিতীয় অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ এই দণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ৷
তৃতীয় অভিযোগ ( সোহাগপুরে নির্বিচারে হত্যা): একাত্তরের ২৫ জুলাই সকালে আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ও নারীদের ধর্ষণ করে৷ ওই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে গ্রামটি বিধবাপল্লী নামে পরিচিত হয়৷আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(২) ধারা অনুসারে তৃতীয় অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইবু্যনাল৷ এই অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তাঁকে মৃতু্যদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ৷ আন্তর্জাতিকঅপরাধ(ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(২) ধারায় চতুর্থ অভিযোগেও কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইবু্যনাল৷ তবে আপিল বিভাগ এই অভিযোগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন৷
সপ্তম অভিযোগ (দারাসহ ছয়জনকে হত্যা): মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান বেলা একটার দিকে কামারুজ্জামান ১৫-২০ জন আলবদর সদস্যকে নিয়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার কাঁচিঝুলি গ্রামের গোলাপজান রোডে ট্যাপা মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান৷ ট্যাপা ও তাঁর বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে অবস্থিত আলবদর ক্যাম্পে নেওয়া হয়৷ পরদিন সকালে আলবদররা তাঁদের আরও পাঁচজনের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে সারিতে দাঁড় করায়৷ প্রথমে ট্যাপাকে বেয়নট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফিয়ে পড়েন৷ আলবদররা গুলি করলে তাঁর পায়ে লাগে, তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন৷ অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়৷
সপ্তমঅভিযোগে অপরাধের গভীরতা ও আনুপাতিকভাবে আসামির সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইবু্যনাল৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তাঁর এই দণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ৷এমন এক দিনে আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করল, যেদিন একই অপরাধে দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে হরতাল করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সংগঠনটি৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল৷এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে৷ আর তাকে মৃতু্যদণ্ড দেওয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে৷ তবে চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইবু্যনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ৷প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ট্রাইবু্যনালের দেওয়া দণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত রায়েও বহাল রাখা হয়েছে৷
দ্বিতীয় অভিযোগে এক শিক্ষককে নির্যাতনের ঘটনায় এই জামায়াত নেতাকে ট্রাইবু্যনাল ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়৷ আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় আসামিকে দেওয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ দুটি সাজাই বহাল থাকবে৷ প্রসিকিউশনের প্রথম অভিযোগে শেরপুরের কালীনগর গ্রামের বদিউজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ তাকে খালাস দিয়েছে৷ প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে ট্রাইবু্যনালের রায়ে জানানো হয়েছিল৷ প্রসিকিউশনের আপিল না থাকায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি৷ ট্র্রাইবু্যনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু রায়ের পর বলেন, আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর তা ট্রাইবু্যনালে গেলে ট্রাইবু্যনাল মৃতু্য পরোয়ানা জারি করবে৷ এরপর সরকার তা কার্যকর করবে৷এর আগে তার দলেরই আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার আপিল নিষ্পত্তির পর ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃতু্যদণ্ডাদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷ এরপর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তার মৃতু্যদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়৷আর চলতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিলের দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা মৃতু্যদণ্ড থেকে কমিয়ে আমৃতু্য কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত৷
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রত্যাশিত বিচার কাজ শুরু হয়৷ ওই বছর ২১ জুলাই কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল৷ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে একটি মামলায় একই বছর ২৯ জুলাই তাকে গ্রেপ্তারের পর ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷ট্রাইবু্যনালের প্রসিকিউশন ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইবু্যনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে৷ ৩১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়৷ পরে মামলাটি ট্রাইবু্যনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয়৷ ওই বছর ৪ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়৷ প্রসিকিউশনের পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১৮ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন৷ আর আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দেন পাঁচজন৷স্বাধীনতার পরের বছর ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন কামারুজ্জামান৷ ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করার পর সামরিক শাসক জিয়াউর রহমনের আমলে ১৯৭৮-৭৯ সালে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন৷১৯৭৯ সালের অক্টোবরে কামারুজ্জামান মূল দল জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর রুকনের দায়িত্ব পান৷১৯৮২-১৯৮৩ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন৷১৯৯২ সাল থেকে তিনি দলে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বে রয়েছেন৷