• বঙ্গবন্ধু
  • আমাদের পাতা
  • মতামত
  • বিজ্ঞাপন
  • যোগাযোগ
Friday, May 23, 2025
  • Login
No Result
View All Result
মুক্তিযোদ্ধা নিউজ
  • রাজনীতি
  • মুক্তিযোদ্ধা
    • বীর মুক্তিযোদ্ধা
    • প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা
  • সাহিত্য পাতা
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • মুক্তিযুদ্ধের গল্প
    • ছবি গ্যালারি
    • ভিডিও গ্যালারি
  • প্রজ্ঞাপন
  • মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান
মুক্তিযোদ্ধা নিউজ
  • রাজনীতি
  • মুক্তিযোদ্ধা
    • বীর মুক্তিযোদ্ধা
    • প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা
  • সাহিত্য পাতা
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • মুক্তিযুদ্ধের গল্প
    • ছবি গ্যালারি
    • ভিডিও গ্যালারি
  • প্রজ্ঞাপন
  • মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান
No Result
View All Result
মুক্তিযোদ্ধা নিউজ
No Result
View All Result
Home Common

এক ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার ভাষ্য:  ‘‘দ্রুত এদের শস্তিগুলো কার্যকর করা উচিত’’

সৈয়দ রেজওয়ান আলী বীর প্রতীক

Syed Refaquat RAJOWAN by Syed Refaquat RAJOWAN
2014-11-05 09:31:52
in Common, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের গল্প
4 min read
এক ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার ভাষ্য:  ‘‘দ্রুত এদের শস্তিগুলো কার্যকর করা উচিত’’

Syed Rezwan Ali BP

মুক্তিযোদ্ধা নিউজ – ঢাকা, ৫ নভেম্বর:  ‘আমরা তখন সিক্সে পড়ি। সেভেনের সামনে দিয়ে যেতেই ভয় করত। স্যাররা ক্লাসে আসতেন বেত নিয়ে। বেতের ভয়েই পড়া শিখছি। তারা শুধু মারতেন না, আমাদের পাশে থাকতেন, ভালোবাসতেন। শিখাতেও কার্পণ্য করতেন না। এখন তো কোচিং ছাড়া লেখাপড়াই হয় না।’’ তাঁর জীবনের পেছনের গল্পগুলো শুনছিলাম মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক সৈয়দ রেজওয়ান আলীর মুখে। অভিমানী ও ত্যাগী এই মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন এই নগরেই, খবরটি পাই তাঁরই এক সহযোদ্ধার কাছে। অতঃপর মুঠোফোনে চলে বার কয়েক আলাপচারিতা। তিনি বলেন: ‘‘কী হবে আর পেছনের গল্প শুনে?’’

RelatedPosts

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা

তৃতীয় ধাপে ১২ হাজার ১১৬ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ

২০ হাজার টাকা করে সম্মানী পাবেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ছে

‘‘পেছনের গল্প না হলে তো ভবিষ্যতের গল্পগুলো প্রাণ পাবে না।’’ এমন উত্তরে এ মুক্তিযোদ্ধার মন গলে। অতঃপর এক সকালে মিরপুরে তাঁর ছেলের ভাড়া বাসাতে বসেই চলে তাঁর সঙ্গে কথোপকথন।

সৈয়দ রেজওয়ান আলীর বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার পাড়শাল নগর গ্রামে। তাঁর জন্মের নয় দিন পরই মারা যান তাঁর বাবা সৈয়দ হাশেম আলী। তাই তাঁর স্মৃতিতে বাবা নেই। বড় দুই বোন আর মা সৈয়দা সাজেদা বেগমের আদরেই বেড়ে ওঠা। জমিজমা যা ছিল তা থেকে পরিবার চলত না। টাকার সমস্যা হলেই পাশে এসে দাঁড়াতেন চাচা সৈয়দ সায়েম আলী।

রেজওয়ান লেখাপড়া শুরু করেন পারশাল নগর প্রাইমারি স্কুলে। শৈশবের স্মৃতির কথা বলতে গিয়েই নিজের শিক্ষকদের অবদানের মূল্যায়ন করলেন তিনি। বললেন শৈশবের আরও অনেক কথা। নজরুল, সাইদুর, ভারু মিয়া ছিলেন তাঁর খেলার সাথী। বাতাবি লেবু দিয়ে তখন ফুটবল খেলেছেন। রেজওয়ান খেলতেন সেন্টার ফরওয়ার্ডে। ইছামতি নদীতে বান দিয়ে মাছ মারার যে কী আনন্দ! শীতের রাতে খেজুরের রস চুরি করে খাওয়ার মজাও ছিল অন্যরকম। গ্রামে কোন গাছের রস কেমন তা ওই দামাল ছেলেরা ঝটপট বলে দিতে পারতেন। রেজওয়ানের বাল্যবন্ধুদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। কিন্তু তাঁদের স্মৃতিগুলো তাঁর মনে জীবন্ত হয়ে আছে।

রাজনীতি বোঝার বয়স হয়নি তখনও তাঁর। তবে কিছু বৈষম্যের খবর কিশোর মনকেও নাড়া দিত। তখন এ দেশে কাগজের দিস্তা ছিল দশ আনা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে তা চার আনাতেই পাওয়া যেত। অথচ কাগজ তৈরি হত পূর্ব পাকিস্তানেই। পাঠানরা কিছুটা সম্মান দিলেও পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের সহ্যই করতে পারত না। সরকারের উচ্চ পদে ছিল তাদের লোক। একটা রেডিও ছিল চেয়ারম্যান বাড়িতে। সেখান থেকেই ওঁরা সব খবরাখবর পেতেন। বাঙালিদের প্রতি বৈষম্য আর অবহেলার খবরগুলো তাঁদের মনেও ঝড় তুলত।

abbudv১৯৬৫ সালে এলএসজে হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন রেজওয়ান। ওই বছরের ডিসেম্বরেই যোগ দেন পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে। তিনি তখন বিএল কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছেন। বিমানবাহিনীতে লোক নেওয়ার খবরটি পান কলেজের নোটিশ বোর্ডে। খুলনা সার্কিট হাউজে লিখিত পরীক্ষার পর মেডিকেলেও পাশ করেন। রিক্রুটিং অফিসার ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুর রহমান। তাঁদের প্রথম পাঠানো হল চট্টগ্রামে, ট্রানজিট ক্যাম্পে। সেখানে কাটল কয়েক মাস। পরে ঢাকায় এনে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় করাচিতে। সেখান থেকে ট্রেনে করে যান পেশোয়ার, কোহাট ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে ট্রেনিং হয় আরও ৬ মাস। রেজওয়ান যোগ দেন এয়ারম্যান হিসেবে। বিমানবাহিনী নম্বর ছিল ৭৬৯৭২। বেসিক ট্রেনিংয়ের পর ৩ মাসের ফিজিক্যাল ট্রেনিং নিয়ে কর্পোরাল হলেন। ‘স্কুল অব ফিজিক্যাল ফিটনেস’এ ছিল তাঁর পোস্টিং। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি এয়ার ফোর্সের কর্পোরাল পদেই কর্মরত ছিলেন।

উনিশশ’ একাত্তরে যখন দেশে অসহযোগ চলছে, রেজওয়ান তখন পশ্চিম পাকিস্তানে। ব্যারাকের ভেতর বাঙালি সৈন্যদের প্রতি পাকিস্তানিদের মনোভাবের কথা জানালেন তিনি। ছিলেন মেসের ইন-চার্জ। স্পোর্স ম্যানরা সেখানে থাকত। সুইমাররা অধিকাংশই ছিল বাঙালি। পাঞ্জাবি সৈন্যরা বাঙালিদের পেছনে লেগেই থাকত।

নওসেরায় ছিল আর্মি ক্যাম্প। অসহযোগের সময় সেখানকার বাঙালি সেনারা গোপনে ব্যারাকের মেসের খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়। ফলে কয়েকজন পাঞ্জাবি মারা যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। রেজওয়ানের মেসে আসে বড় বড় অফিসাররা। বলে, ‘ব্যাটা, খাবার তৈয়ার হ্যায়?’ ‘ইয়েস স্যার’ বলতেই প্রশ্ন করে, ‘হ্যাভ ইউ টেস্টেড ইট?’ ‘ইয়েস, আই হ্যাভ টেস্টেট’। তবুও সবার সামনে রেজওয়ানকে টেস্ট করতে বলে। সব ঠিক দেখে তারা তাঁকে বাইরে না গিয়ে রুমেই থাকার নির্দেশ দেয়।

তখন আরেকটি ঘটনা ঘটে। এক পাঞ্জাবি সেনার ভগ্নিপতি পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালিদের হাতে মারা যায়। রেজওয়ানকে দেখেই হঠাৎ ওই পাঞ্জাবি চড়াও হয় তাঁর ওপর। তার সঙ্গে রেজওয়ানের সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু তাঁর অপরাধ ছিল একটাই, তিনি বাঙালি। তারপর থেকে রেজওয়ান আর রুম থেকে বের হতেন না। কীভাবে দেশে ফিরবেন সে চিন্তাই করতেন।

শেষে একটা বুদ্ধি আঁটলেন। বেলা রাণী বোস নামে বাগেরহাটে তাঁর এক বান্ধবী থাকতেন। তাঁকে সব জানিয়ে চিঠি লিখলেন। তিনি একটি টেলিগ্রাম পাঠালেন: ‘তোমার স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়’। ব্যারাকের ওসি ছিলেন ইমতিয়াজ। একসময়কার নামকরা ক্রিকেটার। রেজওয়ানকে পছন্দ করতেন। তার কোয়ার্টারে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে টেলিগ্রামটি দেখালেন রেজওয়ান। কাগজে-কলমে যে তিনি অবিবাহিত, ইমতিয়াজ সেটা জানতেন না। তাঁকে শান্তনা দিয়ে বললেন, ‘কালই হাম তুম কো ভেজ দেগা’। এক মাস ছয় দিনের ছুটি দিয়ে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই তিনি রেজওয়ানকে পাঠিয়ে দেন দেশে।

দেশে ফিরে কী দেখলেন এই বীরপ্রতীক? দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালেন:

‘‘গ্রামে ফিরে দেখি নকশালরা মানুষ কাটতাছে আর মারতাছে। সবুর ছিল আমাদের ওখানকার নকশাল চেয়ারম্যান। অ্যাডভোকেট মোস্তফা প্রেসিডেন্ট। দেশ না, তারা নকশাল আদর্শ বাস্তবায়নে ব্যস্ত। এসব দেখে আমি ভারতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। প্রথম আসি বাগেরহাটে, চাচার বাড়িতে। সেখান থেকে খুলনা হয়ে বরদল নামক স্থানে দেখা হয় মেজর আরিফিনের সঙ্গে। তাঁর মাধ্যমেই কালিগঞ্জে বর্ডার পার হয়ে চলে আসি ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ। সেখানে থেকে বশিরহাট হয়ে চলে যাই কল্যাণীতে। সেখানে দেখা হয় ৮ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর এম আবুল মঞ্জুরের সঙ্গে। তিনি আমার পূর্বপরিচিত ছিলেন। আমাকে দেখেই বললেন, ‘গেট ইন টু মাই জিপ।’ নিয়ে আসেন পেট্রাপোলে। কয়েকদিন পরেই ৮ নং সেক্টরের ব্রেভো কোম্পানির কমান্ডার বানিয়ে দিলেন। কোম্পানি নিয়ে আমরা চলে যাই কাশিপুরে। বাঁশবাগানের ভেতর গড়ি ক্যাম্প। আর্মি, নেভি, ইপিআর, পুলিশের সব মিলিয়ে দেড়শ জনের মতো লোক ছিল ব্রেভোতে।’’

ক্যাম্পের সব দেখভালের দায়িত্ব ছিল রেজওয়ানের ওপর। তবুও ব্রিজ ডেমুলেশন করতে ডাক পড়ত। অক্টোবর বা নভেম্বরের ঘটনা। যশোরের চৌগাছা সলুয়াবাজারের কাছে ব্রিজ উড়ানোর পরিকল্পনা হয়। ঈদের দিন। রেজওয়ানরা সত্তর জনের মতো। রাত দুটোর দিকে কপোতাক্ষ নদী পার হয়ে পজিশন নেন। তিন দিকেই ছিল পাকিস্তানি সেনারা। রাইট ব্যাকআপ পার্টি, লেফট ব্যাকআপ পার্টি, সেন্ট্রাল পার্টি ও এয়ার ব্যাকআপ পার্টি, এ রকম ৪ দলে ভাগ হয়ে আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওয়ারলেসসহ রেজওয়ান সেন্ট্রালের সঙ্গে থাকেন। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ব্রিজে টিঅ্যান্ডটি স্লাব ও ফিউজ ফিট করে তার নিয়ে এসে তাঁকে সিগন্যাল দেন। ওঁরা তখন নদীর তীরে প্রায় এক কিলোমিটার ব্যাকে গিয়ে তা বার্স্ট করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিন পাশ থেকে পাকিস্তানি সেনারা হাজার হাজার অটো রাইফেলের গুলি চালাতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখেন শেলও পড়ছে। সবাই নদীতে ঝাঁপ দিলেন। নদীই তাঁদের রক্ষা করে। সকালের দিকে বহু কষ্টে ওঁরা গিয়ে উঠেন বয়রায়।

ওই অপারেশনে ৫ জন শহীদ হন। এয়ারফোর্সের রইসউদ্দিনের লাশটাও ওঁরা আনতে পারেননি, এই আক্ষেপ রয়ে গেছে এখনও রেজওয়ানের মনে। সহযোদ্ধাদের স্মৃতিতে আনমনা হয়ে পড়েন তিনি। জলে ভরে যায় চোখ দুটো। আমরা তখন নিরব থাকি। মুক্তিযুদ্ধে সহযোদ্ধা হারানোর কষ্ট লাঘবের ভাষা আমাদের জানা নেই। তাঁদের রক্তের ঋণ শোধ হবার নয়।

যুদ্ধের এক পর্যায়ে আহত হন বীর প্রতীক রেজওয়ান আলী। কী ঘটেছিল রক্তাক্ত সে দিনে?

‘‘নভেম্বর মাস তখনও শেষ হয়নি। ব্রেভো কোম্পানির ক্যাম্প বয়রাতে। গোলাগুলি চলছিল প্রবলভাবে। আমি ছিলাম ট্যান্সের ভেতর (মাটির সুড়ঙ্গ বা কুয়োর মতো গর্ত)। উপরে তাঁবু দেওয়া। যশোরের একলাস উদ্দিন এমপি ছিলেন আমার সঙ্গে। দুপুরের ঠিক পরেই আক্রমণের ধরন পাল্টে যায়। তখন শত শত শেল এসে পড়ে ক্যাম্পের চারপাশে। আমি উঠতে যাব, এমন সময় একটি শেলের স্প্রিন্টার আমার বাঁ হাতের কনুই ভেদ করে বেরিয়ে যায়। প্রথমে টের পাইনি। টপটপ করে রক্ত ঝরছিল। আমি পজিশন নিয়ে ট্রিগার ধরে বসে আছি। পাশ থেকে সহযোদ্ধার বলতেই দেখি হাতটি রক্তে লাল হয়ে গেছে।’’

আহত হওয়ার ঘটনা বলছেন বীর প্রতীক রেজওয়ান:

দেশ যখন স্বাধীন হয় তখন আপনি কোথায়?

‘‘ডিসেম্বরের ৩ তারিখ থেকে ভারতীয় সেনারা আমাদের সঙ্গে ফিল্ডে চলে আসে। ওইদিনই আমরা যশোর স্বাধীন করে সার্কিট হাউজে পৌঁছে যাই। পরে হেলিকপ্টারে করে চলে আসি ঢাকায়। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। এখন যেখানে শিশুপার্ক সেখানেই হয়েছিল আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা। অথচ ওই জায়গাটিকে আমার সংরক্ষণ করিনি।’’

স্বাধীন হলেও তখন গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করেনি। সেখানকার অপারেশনের আদ্যোপান্ত শুনি বীর প্রতীক রেজওয়ান আলীর জবানিতে–rezwan-01

‘‘মঞ্জুর স্যার জানালেন খবরটি। তিনি আমাকে ভাটিয়াপাড়ায় যাওয়ার নির্দেশ দেন। সঙ্গে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কোমল সিদ্দিকী। ওয়ারলেস সেন্টারের ভেতরে পাকিস্তানি সেনারা হেভি পজিশন নিয়ে অবস্থান করছিল। এক ক্যাপ্টেনসহ ছিল ৩২০ জন। চারপাশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের ঘিরে আছে।

১৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১। সকাল বেলা। থেমে থেমে গুলি চলছিল। দুটি গাছের আড়ালে কোমল সিদ্দিকী ও আমি পজিশন নিই। ওয়ারলেস ছিল আমার কাছে। টাইম টু টাইম মেসেজ দিচ্ছিলাম মঞ্জুর স্যারকে। পাশে গাছের আড়াল থেকে কোমল সিদ্দিকী বলেন, ‘বিড়ি আছে রেজওয়ান?’ তাঁর দিকে সিগারেট ও ম্যাচ ছুঁড়ে দিলাম। তিনি সিগারেটটি ধরানোর সঙ্গে সঙ্গেই একটি গুলি তাঁর চোখ বিদ্ধ করে। পিনপিনিয়ে রক্ত বেরুচ্ছিল তাঁর চোখ দিয়ে। ক্রলিং করে গিয়ে তাঁকে পেছনে টেনে নিয়ে যাই, তুলে দিই অন্য সহযোদ্ধাদের কাছে। পাল্টাপাল্টি গুলি চলছিল তখনও। আমরা তাদের সারেন্ডার করতে বললাম। উত্তরে ওরা বলে, ‘যদি কোনো সোলজার থাকে তার কাছে সারেন্ডার করব, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নয়।’ আমি নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের সারেন্ডার করতে বলি। তারা এতে রাজি হয়। কোরআন শরীফ আর ফ্ল্যাগ নিয়ে এগোলে ওরা আসে সাদা কাপড় নিয়ে। ফ্ল্যাগের ওপর কোরআন শরীফ রেখে তার ওপর ওদের ক্যাপ্টেন আর আমি হাত দিয়ে শপথ করি। কেউ কাউকে মারব না, এটাই ছিল সারেন্ডারের নিয়ম। ঠিক সে সময় পাঞ্জাবি এক সেনা দূর থেকে চিৎকার করে বলে, ‘হাম সারেন্ডার নেহি করেগা।’ বলেই সে নিজের পেটে গুলি করে। পরে আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।’’

ভাটিয়াপাড়া, গোপালগঞ্জে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের বর্ণনা:

সেক্টর কমান্ডার মঞ্জুরকে কাছ থেকে দেখেছেন রেজওয়ান। কেমন দেখেছেন জানতে চাইলে খানিকক্ষণ নিরব থেকে বলেন:

‘‘যুদ্ধের সময় তাঁকে দেখেছি একজন সৎ, ইন্টেলিজেন্ট, কর্মঠ ও চৌকস অফিসার হিসেবে। দেশের জন্য জীবন দিতেও তিনি প্রস্তুত ছিলেন। আমাদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘মরে যাই তাতে কী, বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ছাড়বই।’’’

মুক্তিযুদ্ধের পর অস্ত্র জমা নেওয়ার জন্য মিলিশিয়া ক্যাম্প গঠন করা হয়। রেজওয়ান ছিলেন ফরিদপুর ডিগ্রি কলেজ মিলিশিয়া ক্যাম্পের ইন-চার্জ। ঝাট রেজিমেন্টর ক্যাপ্টেন মার্টিনও ছিলেন তাঁর সঙ্গে। পরে এয়ার ফোর্সে জয়েন করেন রেজওয়ান। কর্মজীবন শেষে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার হিসেবে রিটায়ার করেন।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে অকপটে নিজের মতামতটি তুলে ধরেন এই বীর প্রতীক। তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার বিবেচনায়, ভারতীয় আর্মিরা আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাই তাদের সম্মুখেই আমাদের অথরিটির স্বাক্ষরে সারেন্ডার অনুষ্ঠান হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা।’’

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন:

rezwan-04‘‘‘যশোরের ঝিকরগাছা এলাকায় রাজাকারদের দেখেছি ট্যাক্স উঠাতে। তারা হিন্দু মেয়েদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দিয়ে আসত। কয়েকজনকে আমরা ধরে আনলে তারা তা স্বীকারও করে। নামকরা রাজাকার মওলানা আবুল কালাম আজাদ। সে কী অত্যাচার করছে আমাদের এলাকাতে গিয়ে জেনে আসেন। পরে সে হল ইসলামি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক! বড় বিচিত্র দেশ আমাদের। এদের বাঁচিয়ে রাখলেই পাপ বাড়বে। তাই দ্রুত এদের শস্তিগুলো কার্যকর করা উচিত।’’

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীন অবস্থা প্রসঙ্গে বীর প্রতীক রেজওয়ান বলেন:

‘‘যদিও উপায় ছিল না, তবুও পাকিস্তান-ফেরত বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে বাহিনী গঠন করা ঠিক হয়নি। ফলে সামরিক বাহিনীতে এখনও পাবেন পাকিস্তানি আদর্শের লোক। ডিফেন্সের জন্য তা কখনও ঠিক ছিল না।’’

রাজাকারদের উত্থান সম্পর্কে তাঁর মত:

‘‘জিয়ার হাত ধরেই তারা রাজনীতিতে এসেছে, ইতিহাস থেকে এটা মুছে ফেলা যাবে না। পরে রাজনৈতিক সকল দলের হাত ধরেই তারা তাদের সংগঠন বড় করেছে। ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। স্বাধীন দেশে টাকা উড়িয়ে তারা শক্ত ভিত তৈরি করেছে।’’

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে বীর প্রতীক রেজওয়ান অকপটে বলেন:

‘‘বঙ্গবন্ধু না হলে দেশে স্বাধীনতা আসত না। তাঁকে হত্যা করে আমরা আমাদের গৌরবের ইতিহাসকেই কলঙ্কিত করেছি।’’

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রসঙ্গে তাঁর মত, স্বাধীনতার পরই তালিকা চূড়ান্ত করা দরকার ছিল। তখন সকল লিস্ট ছিল সরকারের হাতে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অ-মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের আনার দায় ওই সময়কার সরকারকেই নিতে হবে। সরকার এখন যে উদ্যোগগুলো নিয়েছে এটা আরও আগে নিলে ভালো হত।

যে দেশের স্বপ্ন দেখে মুুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন তা কি পেয়েছেন?

মুচকি হেসে রেজওয়ান বলেন: ‘‘স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু মানুষ পাইনি। এখন পয়সা ছাড়া চাকরি হয় না। মেধার কোনো মূল্য নাই। তাহলে তো জাতিই একদিন মেধাশূন্য হয়ে যাবে। সব জায়গায় চলছে ঘুষের ছড়াছড়ি। নৈতিক চরিত্র ভালো না হলে এ দেশ তো এগোতে পারবে না বাবা।’’

দেশ নিয়ে নানা অতৃপ্তি ও ক্ষোভের কথা বলেন বীর প্রতীক রেজওয়ান আলী:

বুকে জমানো কষ্ট আর আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন:

‘‘আমি মুক্তিযোদ্ধা, দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। সরকার ‘বীর প্রতীক’ খেতাব দিয়েছে। কিন্তু খেতাব দিয়া বাবা আমি কী করুম? আমার তো মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই নাই। ছেলেদের বাড়ি বাড়ি থাকি। চিকিৎসার সুবিধা পাই না। সাত বার কর্জ করে প্লটের আশায় আবেদন করেছি। কিন্তু প্লট তো মিলে না। মিলে শুধু আশ্বাস। দেশের জন্য কি আমি কিছুই করিনি? প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে একটা দরখাস্ত লিখে রেখেছি। বীর প্রতীক খেতাব আমার দরকার নাই। এ খেতাব আপনি ফিরিয়ে নেন।’’

rezwan-02

শত আক্ষেপ আর অভিমান থাকলেও পরবর্তী প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধেন বীর প্রতীক রেজওয়ান আলী। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন:

‘‘তোমরাই আমাদের ভরসা। তোমরা নৈতিকতার শিক্ষাটা শিখে নিও। বাবা-মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার কর। বড়দের সম্মান কর। আর মনে রেখ, এই দেশটা এমনি এমনি আসেনি। তাই সততার সঙ্গে দেশের জন্য কাজ করার দায়িত্ব তোমাদের সবার।’’

সংক্ষিপ্ত তথ্য

নাম: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক সৈয়দ রেজওয়ান আলী।

পদবী: বিমান বাহিনীর কর্পোরাল। বিমান বাহিনী নম্বর-৭৬৯৭২।

যুদ্ধ করেছেন যেখানে: ৮ নং সেক্টরের অধীন ব্রেভো কোম্পানির কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ করেন যশোরের বিভিন্ন এলাকায়।

যুদ্ধাহত হলেন যেভাবে: ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে বয়রায় পাকিস্তানি সেনাদের ছোঁড়া শেলের একটি স্প্রিন্টার তাঁর বাঁ হাতের কনুই ভেদ করে বেরিয়ে যায়।

সালেক খোকন : লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক। ছবি ও ভিডিও: সালেক খোকন।

This entry was posted on নভেম্ভর ৫, ২০১৪ at ১২:৫৬ অপরাহ্ণ and is filed under মুক্তিযুদ্ধ. .> bdnews24.com

Tags: #rezwanalibirprotik#rezwanbirSyed Rezwan Ali Bir Protikএক ত্যাগী মুক্তিযোদ্ধার ভাষ্য:  ‘‘দ্রুত এদের শস্তিগুলো কার্যকর করা উচিত’’একাত্তরে যশোরবীর প্রতীকবীর প্রতীক সৈয়দ রেজওয়ান আলীভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধমুক্তিযুদ্ধে ৮ নং সেক্টরমুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীমুক্তিযুদ্ধে ব্রেভো কোম্পানিমুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসমুক্তিযোদ্ধামুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক সৈয়দ রেজওয়ান আলীযুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা
Share32Tweet13Share4
Previous Post

সব রায় কার্যকর করে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করব: প্রধানমন্ত্রী

Next Post

আগে রিভিউ পরে প্রাণ ভিক্ষার সিদ্ধান্ত: কামারুজ্জামান

Syed Refaquat RAJOWAN

Syed Refaquat RAJOWAN

Editor In Chief Muktijoddha NEWS and Doinikbarta (http://doinikbarta.com)

Discussion about this post

Popular News

  • সহজ শর্তে ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ’ প্রতিবেদন চূড়ান্ত

    সহজ শর্তে ‘মুক্তিযোদ্ধা গৃহনির্মাণ ঋণ’ প্রতিবেদন চূড়ান্ত

    9140 shares
    Share 5434 Tweet 1544
  • অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি জামুকার সহকারী উপপরিচালক বরখাস্ত

    6894 shares
    Share 3575 Tweet 1383
  • মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ছে

    4839 shares
    Share 1936 Tweet 1210
  • লাল মুক্তিবার্তায় নাম থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই লাগবে না

    3902 shares
    Share 1561 Tweet 976
  • বিনা সুদে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা করে ঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা।

    4340 shares
    Share 2323 Tweet 840
  • বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের নতুন আদেশ

    2608 shares
    Share 1043 Tweet 652
  • মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নতুন করে নাম এলো যাদের

    2690 shares
    Share 1140 Tweet 646
  • ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ

    2489 shares
    Share 996 Tweet 622
  • মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ২০ হাজার টাকা করার সুপারিশ

    2260 shares
    Share 904 Tweet 565
  • অনলাইনে মিলবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ৩৮ সেবা

    3229 shares
    Share 2010 Tweet 508

Recommended

কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীরসহ ৫৮ জন পাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

8 years ago

বিজয়ের মাস শুরু

7 years ago

১৯৭১ সালের এইদিনে ডিমলা মুক্ত হয় যে ভাবে

5 years ago

শর্ত জুড়ে দেয়ার ভাতা প্রতাখ্যান, গৌরনদীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ

10 years ago

মুক্তিযোদ্ধা

Category

  • Common
  • অপরাধ
  • ছবি গ্যালারি
  • প্রজ্ঞাপন
  • প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা
  • বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • মতামত
  • মুক্তিযুদ্ধ
  • মুক্তিযুদ্ধের গল্প
  • মুক্তিযোদ্ধা
  • মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান
  • মুক্তিযোদ্ধা নিপীড়ন
  • যুদ্ধাপরাধ
  • রাজনীতি
  • সশস্ত্র বাহিনী
  • সাহিত্য পাতা
  • স্বাস্থ্য ও চিকিত্‍সা

Site Links

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

About Us

দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের প্রজন্মের সকল খবরাখবর নিয়ে আমাদের এই প্রচেষ্টা, বাংলাদেশের সর্ব প্রথম এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম। সাথে থাকুন, অংশগ্রহণ করুন, চলুন একসাথে এগিয়ে যাই।।

  • বঙ্গবন্ধু
  • আমাদের পাতা
  • মতামত
  • বিজ্ঞাপন
  • যোগাযোগ

© 2020 মুক্তিযোদ্ধা নিউজ - বাংলাদেশের সর্ব প্রথম এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম। by i-Bangla Limited.

No Result
View All Result
  • রাজনীতি
  • প্রজ্ঞাপন
  • মুক্তিযোদ্ধা
    • বীর মুক্তিযোদ্ধা
    • প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা
  • সাহিত্য পাতা
    • মুক্তিযুদ্ধ
    • মুক্তিযুদ্ধের গল্প
    • ছবি গ্যালারি
    • ভিডিও গ্যালারি
  • মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান

© 2020 মুক্তিযোদ্ধা নিউজ - বাংলাদেশের সর্ব প্রথম এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম। by i-Bangla Limited.

Welcome Back!

Login to your account below

Forgotten Password?

Create New Account!

Fill the forms bellow to register

All fields are required. Log In

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.

Log In