দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর: মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবস৷ জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে নয়মান সশ্রস্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদর্ী উদ্যানে) হানাদার পাকিসত্মানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে৷ বিশ্বের মানচিত্রে অভু্যদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের৷যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী দীর্ঘ নয় মাস ত্রিশ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, দু’লাখ মা-বোনের সম্বম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গস্ন্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয়৷ সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর জাতির বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে৷ এ দিনটি হচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিবস৷ বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিবস৷
মঙ্গলবার কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার প্লানি মোচনে প্রাণ উত্সর্গ করা বীর সনত্মানদের৷ সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে৷ শ্রদ্ধার সাথে তারা শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি৷ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রানত্মের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে৷ বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত৷রাষ্ট্রপতি মো.মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ মহান বিজয় দিবসে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার আহবান জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি৷ দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করি৷ এটাই হোক ২০১৪ সালের বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার৷
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ৰুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শানত্মিপূর্ণ মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লৰ্য নিয়ে তার সরকার কাজ করছে-এ কথা উলেস্নখ করে তিনি আশা করেন রূপকল্প ২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাসত্মবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সক্ষম হবেন৷১৬ ডিসেম্বর৷ মহান বিজয় দিবসকে বাঙালি জাতির অনন্য গৌরবের দিন উলেস্নখ করে প্রধান মন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি দীর্ঘ তেইশ বছর রাজনৈতিক সংগ্রাম ও নয় মাস মরণপণ যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ানত্ম বিজয় অর্জন করে৷
তেতালি্লশতম বিজয় দিবস পালন উপলৰে তিনিদেশবাসীকে আনত্মরিক শুভেচছা ও অভিনন্দন জানান৷ বিজয়ের এই দিনে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, জাতীয় চার নেতা, ত্রিশ লাখ শহিদ এবং দুই লাখ মা-বোনকে, যাঁদের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,জাতির পিতার বলিষ্ঠ ও আপোশহীন নেতৃত্বে বাঙালি জাতি বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টি’র ৬-দফা, ১১-দফা, ঊনসত্তরের গণঅভু্যত্থ্যানের মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে৷ ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে৷ ফলে বৈধ ভিত্তি পায় বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্খা৷তিনি বলেন,জাতির পিতা অনুধাবন করেছিলেন স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া বাঙালি জাতির ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও বঞ্চনার অবসান হবে না৷ তাই তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকন্ঠে ঘোষণা দেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’৷ মূলত সেদিন থেকেই শুরু হয় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চূড়ানত্ম অধ্যায়৷ বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন৷ চলে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন,পাকিসত্মানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কালরাতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়৷ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন৷ শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ৷ বাংলাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করেন৷ বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরম্নল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়৷এই সরকার ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে সমবেত হয়ে শপথ গ্রহণ করে এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে৷ মুক্তিযুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়৷ বীর মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় পাক হানাদার এবং তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনেন৷ জাতি পায় স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত৷ বাঙালি জাতির এই বীরত্ব ও দেশাত্মবোধ বিশ্বে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে৷
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে খালেদা জিয়া বলেছেন, ১৯৭১-এ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত আজও বিদ্যমান৷ সেই জন্য ৫ জানুয়ারির প্রহসনের একতরফা নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে৷ এদেশে এখন মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা নেই৷ ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করছে৷ বর্তমান পরিস্থিতি যেন ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যময়৷ এই অশুভ শক্তির নীলনকশা বাস্তবায়নে রক্তপাতের ওপরই নির্ভর করা হচ্ছে৷ ওদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে৷
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১-এ এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো৷ স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার খর্ব হয়েছে৷ প্রতিবারই এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে৷বাণীতে খালেদা জিয়া বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচছা ও অভিনন্দন জানাই৷ তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করি৷ আজকের এ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেসব বীর শহীদদের কথা, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন স্বদেশভূমি পেয়েছি৷ আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি৷ স্বাধীনতার জন্য যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন- তাদের সশ্রদ্ধ সালাম৷
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধে ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ী হয়৷ তাই ১৬ ডিসেম্বর আমদের গর্বিত এবং মহিমান্বিত বিজয় দিবস৷ এদেশের দামাল ছেলেরা হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতার সূর্য৷ আজকের এ মহান দিনে আমি সেসব অকুতোভয় বীর সেনাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন জানাই৷
খালেদা বলেন, ওই অপশক্তির এদেশীয় দোসররা নানাবিধ চক্রান্তজাল রচনা করে আমাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করে চলেছে৷ ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করছে৷মহান বিজয় দিবসে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন৷খালেদা বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন৷
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, বিজয়ের সেই গৌরবদীপ্ত সাহস, শক্তি ও চেতনা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে৷মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে এরশাদ আরো বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের সর্বকালের সবর্ শ্রেষ্ঠ স্বতন্ত্র মহিমা ও মহত্বমন্ডিত মহোত্সবের দিন ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের শ্রেষ্ঠতম গৌরবময় বিজয়ের দিন৷
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায় এই মহান বিজয় দিবসে পরাধীনতার শৃঙ্খল চুর্ণ-বিচুর্ণ করে অকুতভয় মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাসের সংগ্রামের পর অশ্রুমাখা ও রক্তে ভেজা এই শ্যামল বাংলাদেশের মাটিতে এক মহেন্দ্রক্ষণের জন্ম দিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিজয় এনে দিয়েছিল৷ এরশাদ বলেন, দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল ছিন্ন করতে যারা হাসি মুখে প্রাণোত্সর্গ করেছে, পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের জন্য বুকের গভীরের অনত্মঃহীন বেদনা, শক্রকে পরাসত্ম করার গৌরব এবং দেশ স্বাধীন করার অখন্ড আনন্দ,এই ত্রি-ধারার মহামিলন ঘটায় মহান এই বিজয় দিবসে৷বিজয়ের সেই গৌরবদীপ্ত সাহস, শক্তি ও চেতনা নিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়বো এটাই হোক আমাদের অঙ্গিকার৷
বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন৷ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে৷ রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে৷ রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা৷ হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে৷ সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সমপ্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা৷
এবারের বিজয দিবস উদযাপনের সাথে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা৷ শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জবিত জাতি দিবসটি পালন করবে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে৷ অফুরনত্ম আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৩ বছর পূর্ণ হবে কাল৷ গত বছর বিজয় দিবসের মাত্র কয়েক দিন আগে ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত আবদুল কাদের মোলস্নার ফাঁিসর রায় কার্যকর হওয়ায় স্বভাবতই অনুপ্রাণিত ছিল দেশবাসী ৷ মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনত্মত একটি মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় বাকী যুদ্ধাপরাধীদেরও একই পরিনতি হবে এই আশাবাদ এবং প্রত্যাশা নিয়েই উদযাপিত হবে এবারের বিজয় দিবস৷
এর আগে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়াদর্ী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান৷ তিনি বলেছিলেন ‘ এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷ পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিসত্মানী সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন৷বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিসত্মানী হানাদারদের বিরম্নদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ এই মুক্তিযুদ্ধে পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে৷ অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাত্রীর বৃনত্ম থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটনত্ম সকাল৷
বিজয়ের এই ৪৩ বছর অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি৷ কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপোড়নে৷ তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি৷ বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা৷ বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে- চলছে একাত্তরের মানবতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার৷ হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াতেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান৷কর্মসূচি : প্রতু্যষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে৷ সূযের্াদয়ের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পসত্মববক অর্পণের মাধ্যমে একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন৷ বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ অনুরূপভাবে সাভারে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন৷এছাড়াও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ কর্মসূচি নিয়েছে৷
এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পসত্মবক অর্পণ, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷
আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন৷ সকাল ৬টা৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন৷ সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন৷ সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল৷
দুপুরের আগে ঢাকা মহানগর অনর্ত্মগত সকল থানা ও শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যগণ স্ব স্ব এলাকা থেকে বিজয় র্যালিসহ পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক স্থানে সমবেত হবেন এবং সেখানে স্থাপিত শিখা চিরনত্মনে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন৷শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অবিমুখে বিজয় মিছিল৷ পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ এতে প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷