দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ মার্চ : যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন,জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার দাবী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার গ্রহণের মধ্যদিয়ে আজ বৃহষ্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। স্বাধীনতার ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় এবং সারাদেশে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়। এসব কর্মসূচি থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি সম্মিলিত কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গঠনের। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করে এই দিনটিকে। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজ ও ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির ও প্যাগাডোয় দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলাখানা, সরকারি শিশুসনদসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠান সমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। ভোর ৬টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড-অব-অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়েও স্বাক্ষর করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী পরিষদ, উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সাংসদ, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সরকদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকায় সজ্জিত করা হয়। দিবস টি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে এং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, এবং বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
এদিকে সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন শরীরচর্চা প্রদর্শন করে। প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুচ-কাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী বাংলাদেশ শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকাটিকিট প্রকাশ করে। এদিকে সকালে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন জাতীয় স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিদেবন করে।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা জানান। সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ অনেক শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড় হন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ছত্রলীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ, যুব শ্রমিক লীগ, হকার্স লীগ, তাঁতী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, মোটরচালক লীগ, ওলামা লীগ, জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। দিবসটি উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ছায়ানট, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় প্রেসক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা, ঢাকা মহানগরী সমিতি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বিস্তাররিত কর্মসূচি গ্রহণ করে।