দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ জুন: মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা আলবদর কমান্ডার আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করেছেন তার আইনজীবীরা।শনিবার সকাল ১১টার দিকে তার ৫ আইনজীবী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাত করেন।এ সময় আইনজীবী শিশির মনির বলেন,জামাতের এ নেতা রিভিউ করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মসিউল আলম, কামাল উদ্দিন, নাজিবুর রহমান ও মতিউর রহমান আকন্দ।আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করতে হবে মুজাহিদকে বলে জানান তিনি।
এর আগে শিশির মনির জানান,এসব আইনী বিষয়ে আলোচনা করতেই মুজাহিদের সঙ্গে আইনজীবীরা সাক্ষাত করবেন।গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে।এ অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে।মুজাহিদের পরিবার ও জামাতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনার আবেদন(রিভিউ)করা হবে।কারাফটক দিয়ে সকাল ১১টায় ঢোকার পর ১২টার দিকে বেরিয়ে আসেন মুজাহিদের পাঁচ আইনজীবী।আসামির সঙ্গে কথা বলতে তাদের আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল বলে কারাফটকে কর্মরত সুবেদার লাল মিয়া জানিয়েছেন।
গত ১৬ জুন আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার পর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে তার আইনজীবীদের এটাই প্রথম সাক্ষাৎ।২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতারিবোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে আল বদর কমান্ডার মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা ও সহযোগিতার দায়ে দেওয়া ওই রায় আপিল বিভাগও বহাল রাখে।
এখন আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ রয়েছে দণ্ডিত মুজাহিদের।পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তা করতে হবে।সাক্ষাত চেয়ে আবেদন করার পর শিশির মনির বলেছিলেন, আপিল বিভাগের রায় নিয়ে মুজাহিদ কী ভাবছেন, সে বিষয়ে জানতে দেখা করতে চাইছেন তারা। দেখা করে বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, উনি নির্দেশ দিয়েছেন, রায়ের কপি বের হওয়ার পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ করার প্রস্তুতি যেন গ্রহণ করি।আমরা বলেছি, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে উপযুক্ত সময়ে আমরা আপিল বিভাগের সামনে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করব।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কী বলেছেন- জানতে চাইলে এই আইনজীবী বলেন, যে অভিযোগে উনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল, একচুয়ালি কাকে, কখন হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল, এই ব্যাপারটি তার কাছে বোধগম্য হয়নি।তিনি বলেছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি বের হওয়ার পর আমরা যেন পুনরায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসি।এরপর তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় পড়বেন ও বিশ্লেষণ করবেন এবং তার বক্তব্য জানাবেন।রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে নিঃশর্ত খালাস পাবেন বলে নিজের আশাবাদ আইনজীবীদের জানিয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী।
রিভিউ খারিজ হলে জামায়াত নেতার কাছে সুযোগ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন করার। তা না করলে ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।মুজাহিদের আগে তার দলের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাওয়ার পর দুজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়।শিশির মনির জানান,মুজাহিদ দেশবাসীকে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং দোয়া চেয়েছেন।উনি মানসিক ও শারীরিকভাবে দৃঢ় আছেন ও অবিচল আছেন। উনি মনে করেন, রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে উনি ন্যায়বিচার পাবেন।
Discussion about this post