দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ নভেম্বর ২০১৫: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীসহ চারটি বিষয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর স্ত্রীর করা রিট আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। সোমবার বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মহসিন রশিদ।রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করীম। আদেশের পর আমাতুল করীম বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল রিটে। এ বিষয়ে হাই কোর্টের একটি রায় আছে ২০১০ সালের। সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়া একটি বিষয়ে আবারও আলোচনা করলে সময় নষ্ট হবে যুক্তি দেখিয়ে আদালত তা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিযেছে।তবে আবেদনকারী চাইলে অন্য বেঞ্চে আবারও বিষয়টি তুলতে পারবে বলে জানান তিনি।
আমাতুল করীম বলেন,বিষয়টি আগেই হাইকোর্টের অন্য রায়ে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ যদি কোনো আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন, তাহলে নিয়ম অনুসারে আবেদনকারী অন্য বেঞ্চে শুনানির জন্য যেতে পারেন।গত ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর এ রিট আবেদনটি জমা দেওয়া হয়। আবেদনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা ব্যক্তি ও ব্যক্তি সমষ্টির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সুযোগসহ চারটি বিষয় চ্যালেঞ্জ করা হয়।পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ করলে ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টির বিচারের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হয়। রিট আবেদনে ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৬ ধারা অনুসারে হাইকোর্টের বিচারপতিদের ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা সদস্য করা হয়, এটিও চ্যালেঞ্জ করেন সাকা চৌধুরীর স্ত্রী।
ট্রাইব্যুনাল আইনের ৬ ধারা অনুসারে বিচারপতি নিজামুল হককে চেয়ারম্যান করে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই ধারা অনুসারে একাধিকবার হাইকোর্টের বিচারপতিদের ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।২০১৩ সালের ১ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। পরে আপিল বিভাগেও সাকা চৌধুরীকে দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রাখা হয়। গত ৩০ অক্টোবর সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন।
রিভিউ শুনানির আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ চারটি বিষয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রীর করা রিট আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছে হাই কোর্ট।একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) করতে সাকা চৌধুরীর করা আবেদনের শুনানির আগের দিন তার স্ত্রীর ওই আবেদন তালিকা থেকে বাদ পড়ল।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর পাশাপাশি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনও মঙ্গলবার শুনবে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই রিভিউ শুনানি হবে। এই বেঞ্চই গত ১৬ জুন একাত্তরের বদর প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস সালাউদ্দিন কাদের (সাকা)চৌধুরীর আপিলের রায় আসে ২৯ জুলাই।
Discussion about this post