দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যৌথভাবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তারা।শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের পর এক মিনিট নিরবতা পালন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি সকাল ৬ টা ৩৪ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।এরপর তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী,স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীগণ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, প্রতিমন্ত্রীগণ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাগণ, কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতিনিধিগণ এবং উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রাঙ্গণে রাখা পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষরও করেন।রাষ্ট্রীয় সন্মান জানানোর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদীতে আরো একবার শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এরপরে একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও অন্যান্যরা শ্রদ্ধা জানান।
ভোর ৬টা ৪৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের জন্য তা খুলে দেওয়া হয়। পরে স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে।৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্ণ হল আজ। মুক্তির আনন্দে বিভোর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে আজ স্মরণ করছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই অকুতোভয় বীরদের। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ সারা দেশে স্মৃতির মিনারগুলো আজ ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। জাতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় গাইছে মুক্তির জয়গান। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন। ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী মুক্তিযোদ্ধা আর সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। রাতের শীত আর কুয়াশাকে তুচ্ছজ্ঞান করে লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ দেশের শহীদ বেদিগুলোতে। ভোর থেকে মিছিলের শ্রোত গিয়ে মিলে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
এদিকে,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৫তম বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেনপ্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।তিনি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে দলের প্রধান হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুস্পস্তবক অর্পন করেন।এদিকে, প্রধানমন্ত্রী ৪৫তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ৬টি স্মারক ডাকটিকেট, ৩টি উদ্বোধনী খাম, ৩টি ডাটা কার্ড এবং একটি স্যুভেনির অবমুক্ত করেন।তিনি বুধবার সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে স্মারক ডাকটিকেট, ৩টি উদ্বোধনী খাম, ৩টি ডাটা কার্ড এবং একটি স্যুভেনির অবমুক্ত করেন।বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৪৫তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ছয়টি ডাকটিকেট- একটি বিজয় দিবস (১০ টাকা), চারটি ঐতিহ্যবাহী নৌকা (১০ টাকা) এবং ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে সেতার বাদক প-িত রবিশঙ্কর ও বিশ্বখ্যাত গায়ক জর্জ হ্যারিসনের ঐতিহাসিক কনসার্টের ওপর একটি (৬০ টাকা) ডাকটিকেট প্রকাশ করেছে।এছাড়াও, ডাক বিভাগ ১০০ টাকা মূল্যের একটি স্যুভেনির, তিনটি ফার্স্ট ডে কভার (১০ টাকা) এবং তিনটি ডাটা কার্ড (৫ টাকা) প্রকাশ করেছে।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, ডাক ও টেলিযোগযোগ প্রতি মন্ত্রী তারানা হালিম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ, ডাক ও টেলিযোগযোগ সচিব মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়।আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তারপর তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নিরবে দাড়িয়ে থাকেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবুল মাল আব্দুল মুহিত, এইচ টি ইমাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সতীশ চন্দ্র রায়, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
Discussion about this post