মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত তারামন বিবি ভীষণ অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিনের শ্বাস কষ্টা আর কাঁশি বেড়ে গেছে। তার ওপর মাথা ও পিঠ ব্যাথ যোগ হয়েছে। বলতে গেলে তিনি এখন অচল। নিজে নিজে হাঁটাচলাচল করতে পারছেন না গত সাত দিন থেকে। বিছানার পাশেই অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। যখন শ্বাস নিতে পারেন না তখন অক্সিজেনের সহযোগিতা নিচ্ছেন। দিনরাত কমপক্ষে ১০ বার করে অক্সিজেনের সহযোগিতা নিচ্ছে হচ্ছে। আজ সোমবার তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তারামন বিবি বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় আমার সময় শেষ হয়ে আসছে। শরীরের যা অবস্থা। শ্বাস নিতে পারি না। যখন কাঁশি ওঠে মনে হয় দুনিয়াত আর নেই আমি। মাথা ব্যথা করে। সারা পিঠ যেন জ্বলে। উঠে দাঁড়াতে পারলেও হাঁটতে পারি না। গত ক’দিন থেকে খুবই কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছি। তিনবেলা ওষুধপত্র খাওয়ার পরও অসুখের কোনো উন্নতি দেখছি না।’
তারামন বিবি জানান, রংপুর সিএমএইচ (সেনা ক্যান্টমেন্ট হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষকে অসুখের কথা জানানো হয়েছে। তারা আমাকে যেতে বলছেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদ পারি দিয়ে রংপুরে যাওয়াটাই আমার কষ্ট। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। এর আগে পুরো জানুয়ারি মাস ওই হাসপাতালে ছিলাম। কিছুটা সুস্থ্য অনুভব করলাম তারপর ৩১ জানুয়ারি বাড়ি আসছি। গত ৭দিন থেকে হঠাৎ শ্বাস কষ্ট আর কাঁশি বেড়ে গেছে যা সহ্য করতে পারছি না। অসুস্থ্য তারামন বিবিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ও নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা। হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্তমান তাঁর শ্বাসকষ্ট সঙ্গে কাঁশিটা অনেক বেড়ে গেছে। আমরা সার্বক্ষনিক খোঁজখবর নিচ্ছি। হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডার উনার বাড়িতে দিয়েছি। যখন শ্বাসকষ্ট দেখা দিবে তখন অক্সিজেনের সহযোগিতা নিবে। তাছাড়া ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছুটি যাই তাঁর বাড়িতে। সব মিলে তাঁর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়।
কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া গ্রামে বসবাস করেন তারামন বিবি। তারামন বিবির স্বামী আব্দুল মজিদ জানান, রাজীবপুর হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রতিদিন একবার করে বাড়িতে এসে চিকিৎসা প্রদান করছে। বর্তমানে তাঁর শরীরের যে অবস্থা তা এর আগে হয়নি। দিনরাত বিছানাা শুয়েবয়ে অবস্থান করছে। বিছানা থেকে তাঁকে ধরে উঠানাম করাতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১নং সেক্টরের হয়ে তারামন বিবি মুক্তিবাহিনীদের রান্নাবান্ন, তাদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকবাহিনীদের খবরাখবর সংগ্রহ করা এবং সম্মুখ যুদ্ধে পাকবাহিনীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এ কারনে তাকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়েছে। মুক্তিবাহিনীদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনীদের কলুষিত পা পড়েনি রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায়।
Discussion about this post