মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনায় জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর সময়ের আবেদন এক মাস মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আগামী ২৪ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
সোমবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন— সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান। বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে মীর কাসেম আলীর মামলাটি শুনানির জন্য আদালতে উত্থাপন করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ‘নিরাপত্তাহীনতার’ কথা বলে এ মামলার শুনানির প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময়ের আবেদন জানান। তবে খন্দকার মাহবুবের এ আবেদনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর পর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে ২৪ আগস্ট মীর কাশেম আলীর শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করেন। এর আগে আবেদনের বিষয়ে মীর কাসেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময়ের আবেদন করা হয়েছে। আপিল বিভাগের রায়ে এসেছে, এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ত্রুটিপূর্ণ।’
জামায়াতের অর্থ জোগানদাতা হিসেবে পরিচিত মীর কাসেমের এটাই আইনি লড়াইয়ের শেষ সুযোগ। এই আবেদন নাকচ হলে ফাঁসি এড়াতে তিনি শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। তিনি তা না চাইলে কিংবা আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মূল হোতার বিরুদ্ধে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদকে খুনের দায়ে এক অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং আরও ছয় অভিযোগে ৫৮ বছর কারাদণ্ডের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
গত ৬ জুন মীর কাসেমের ২৪৪ পৃষ্ঠার ফাঁসির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। নিয়মানুযায়ী পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। ১৯ জুন ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন মীর কাসেম আলী। মোট ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চাওয়া হয়েছে। ২৫ জুলাই রিভিউ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে আসা এটি সপ্তম মামলা, যার ওপর চূড়ান্ত রায় প্রকাশের পর এখন রিভিউ শুনানির অপেক্ষা। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার যে আবেদন করেছিলেন, তার শুনানি এক মাস পিছিয়েছেন উচ্চ আদালত। আর এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রিসভায় সদস্যরা।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভায় বৈঠকে উপস্থিত সদস্যরা এ বিষয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি জানায়, মন্ত্রিসভায় উপস্থিত সদস্যরা জানিয়েছেন মীর কাসেমের শুনানির সময় আরও একমাস পেছানো কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। এর আগেও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা এ ধরনের মামলায় সময় চেয়েছিল, কিন্তু সময় দেওয়া হয়নি। মীর কাসেমকে সময় দেওয়ার বিষয়টি ‘রহস্যজনক’।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, তার ধারণা সাম্প্রতিক সময়ের সব হামলার জন্য মীর কাসেম আলী দায়ী। কারাগারে বসে সে-ই টাকা খরচ করে এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।বৈঠকে শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘তাকে পুরো আগস্ট মাস সময় দেওয়া হয়েছে, সেই ‘আগস্ট’ মাসই সময় পেল। এ সময়ে সে আরও ঘটনা ঘটাতে পারে। সে শেষ সময়ে মরণ কামড় দিচ্ছে। কাজেই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এ সময় মীর কাসেমকে সময় দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, তাকে সময় দেওয়া ঠিক হয়নি। কেউ রিভিউ পেছানোর জন্য সময় পেল না, সে পেল এটা রহস্যজনক।
Discussion about this post