একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ২ হাজার ৩শ’ ৬৭ জন যোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে ২৩৬৭ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গেরিলা যোদ্ধাদের পক্ষে ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও সুব্রত চৌধুরী।
গত ৮ সেপ্টেম্বর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ২ হাজার ৩শ’ ৬৭ জন যোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে তাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এবং প্রাপ্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও ভাতা দিতেও সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।পরে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।ওই রায় স্থগিতের যে আবেদন রাষ্ট্রপক্ষ করেছিল, প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার তা খারিজ করে দিয়েছে।
এর ফলে ২ হাজার ৩৬৭ গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির বিষয়ে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ই বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন রিটা আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবীরা।ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় একটি গেরিলা বাহিনী গঠন করে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্রসমর্পণ করে ওই গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই ওই গেরিলা বাহিনীর দুই হাজার ৩৬৭ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু পরের বছর ২৯ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই গেজেট বাতিল করে। সেখানে বলা হয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সভার সুপারিশ অনুসারে ক্রুটিপূর্ণ গেজেটটি বাতিল করা হল।
গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য।২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের বেঞ্চ গেজেট বাতিলের প্রজ্ঞাপনের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করে।
সেই সঙ্গে ওই প্রজ্ঞাপন কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে জারি করা হয় রুল। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী উপসচিব ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালকের কাছে এর জবাব চাওয়া হয়।রুলের ওপর শুনানি করে গতবছর ৮ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে। গেরিলা বাহিনীর দুই হাজার ৩৬৭ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে প্রথম দফায় ২০ দিন ও পরের আরও দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয় হাই কোর্টের রায়। অবকাশ শেষে মঙ্গলবার বিষয়টি আদালতে উঠলে শুনানি করে আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেয়।
Discussion about this post