যুদ্ধে স্বামী শহীদ হয়েছেন। তিনি হয়েছেন বীরাঙ্গনা। ঘুষের টাকা দিতে না পারায় স্বামীর স্বীকৃতি মিলেনী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে, মিলেনী তার বীরাঙ্গনার স্বীকৃতিও। ১৪ বছর বয়সে স্বামীকে হারিয়ে ৪৬ বছর ধরে ভাইয়ের সংসারে বসবাস করছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের বীরাঙ্গনা জয়ন্তী বালা দেবী। জয়ন্তীবালার দেবীর পাশ্ববর্তী ভালুকা উপজেলা গোয়ারী গ্রামের উনেস চন্দ্র দেবনাথের ছেলে নিতাই চন্দ্র দেবনাথের সাথে ১৯৬৬ সালে তার বিয়ে হয়। বিয়ের ৪ বছরের মাথায় ১৯৭১ সালের গোয়ালিয়াবাজুর এলাকায় সন্মুখ সমরে তার স্বামী নিতাই চন্দ্র শহীদ হন। পরে জয়ন্তী বালা দেবীকে আছিম রাজাকার ক্যাম্পে দুমাস আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান শহীদজায়া জয়ন্তীবালাকে সমবেদনা জানিয়ে জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। সে সময় তাকে দেয়া হয়েছিল ২ হাজার টাকাও।
মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য গত বছর অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতির জন্য যেখানে গিয়েছেন সেখানে চাওয়া হয়েছে মোটা অংকের টাকা বলে জানান জয়ন্তীবালা দেবী। আপিলে তার নাম টিকিয়ে দেয়ার নাম করে একজন মুক্তিযোদ্ধা ৬০ হাজার টাকা ঘুষদাবী করেছেন। ভাইয়ের বাড়ীতে থাকি চেয়ে মেগে খাই ঘুষ দিমু কইতে বলেই ঘুমড়ে কাঁদলেন বীরাঙ্গনা জয়ন্তীবালা দেবী।ফুলবাড়ীয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবি সিদ্দিক জানান, জয়ন্তী বালা দেবী একজন বীরাঙ্গনা। যুদ্ধে তার স্বামীও শহীদ হয়েছে। এর পর মুক্তিযোদ্দা যাচাই বাছাই কমিটির প্রকাশিত তালিকায় তার নাম নেই। তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা না। টাকার বিনিময়ে অনেকের নাম যাচাই বাছাই কমিটির তালিকায় স্থান পেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি সাবেক এম এন এ আনম নজরুল ইসলাম জানান, জয়ন্তীবালা দেবী যাচাই বাছাই কমিটিতে আবেদন করেছিলেন বলে ইদানিং শুনেছি। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে যাচাই বাছাই হয়েছে সব কিছু খেয়াল নাও থাকতে পারে আপিল করুক আমরা তার জন্য সুপারিশ করবো। তালিকায় নাম অন্তভূক্তির জন্য কেউ যদি তার কাছে ঘুষ চেয়ে থাকে তবে আমাদের কাছে লিখিত ভবে বলুক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। উল্লেখ্য, ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রায় ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন। বাচাই বাছাই শেষে ৩০ এপ্রিল ১৫৬ জনের তালিকা প্রকাশ করেন। যাচাই বাছাই চলাকালে সাক্ষাৎকারের সময় উপস্থিত সকলেই তাকে বীরাঙ্গনা ও তার স্বামী যুদ্ধে শহীদ হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তারপরও বীরাঙ্গনা জয়ন্তীবালা দেবী ও স্বামীর নাম তালিকা ভুক্ত হয়নি।