১১ ডিসেম্বর হিলি শত্রু মুক্ত দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের মতে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয় ভারত সীমান্তবর্তী এই এলাকায়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক সেনাদের সাথে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আকাশ ও স্থলপথে প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৭নং সেক্টরের আওতায় হিলি শত্র“মুক্ত হয়। এসময় এখানে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ৩৪৫ জন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য ও দেড়শতাধিক নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পক্ষান্তরে তিন শতাধিক পাক সেনা নিহত হয়। এছাড়াও অনেক পাক সেনা এখানে আত্মসমর্পণ করে। উদ্ধার হয় পাক সেনাদের ব্যবহৃত ৩০টি ট্যাংকসহ বিপুল সংখ্যক ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেড়িলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের গোলাম মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী এবং চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।হিলি’র সীমান্তবর্তী মুহাড়াপাড়া এলাকায় শহীদ ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বরণে একটি সম্মুখ সমর সৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। হিলি মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে সম্মুখ সমরে ফুল দেয়া, র্যালীসহ নানা কর্মসুচী গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থনের পর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী হিলি’র মুহাড়াপাড়া এলাকা দিয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের চেষ্টা করে। এসময় মুহাড়াপাড়া এলাকায় আগে থেকে মাটির নিচে বাঙ্কার করে লুকিয়ে থাকা বিপুল সংখ্যক পাক সেনা, ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।হিলি’র সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ জানান, রেললাইনের পাশদিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে এবং বন্দুকের গুলিতে শতাধিক ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য নিহত হয়। ব্যপক ক্ষতির মুখে পড়ে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় ভারতে পিছু হেটতে বাধ্য হয়। এর দু’দিনপর ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা পুনরায় সংঘঠিত হয়ে হিলি’র মুহাড়াপাড়া এলাকাসহ পাক সেনাদের বিভিন্ন আস্তাানায় আকাশ ও স্থল পথে একযোগে বিমান ও ট্যাংক নিয়ে হামলা চালায়। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে প্রচন্ড যুদ্ধের পর হিলি শক্র মুক্ত হয়। এসময় সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় তিন শতাধিক পাক সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এসময় পাকসেনাদের ব্যবহৃত ৩০টি ট্যাংকসহ বিপুল সংখ্যক ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়।হিলিতে পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৩৪৫ জন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্য ও দেড়শতাধিক নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। হিলি’র সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ জানান, হিলি’র সম্মুখ যুদ্ধে দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়ার মুক্তিযোদ্ধারা অংশ গ্রহণ করে। হিলি’র মুক্তিযোদ্ধাদের বেশির ভাগই অন্য এলাকায় যুদ্ধরত ছিলো। তাই এখানে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জানা যায়নি।