মনির/দৈনিক বার্তা : ১৬ মে ১৯৭১ সাল। পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ছয়টি গ্রামের ৩৩জন গ্রামবাসীকে। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় ঘরবাড়ী। যা হাসামদিয়া গণহত্যা নামে পরিচিত। বোয়ালমারী উপজেলায় একসাথে এত মানুষকে হত্যা এটিই প্রথম। এ নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর থেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারের সদস্যরা। যদিও আজো নিহতরা পায়নি শহীদের মর্যাদা কিংবা সরকারীভাবে নির্মিত হয়নি স্মৃতি রক্ষায় কোন স্তম্ভ।
হাসামদিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের গ্রাম। ফলে ওই এলাকায় সকল বাচ্চু রাজাকারের প্লান মতই অপারেশন চালাতো আর্মিরা। ১৬ মে ১৯৭১। রেলগাড়ীতে আসেন পাক-আর্মিরা। বোয়ালমারী ষ্টেশন থেকে বহর নিয়ে মার্চ করেন হাসামদিয়ার দিকে। এরপর হাসামদিয়া গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে হত্যা করে ১৩ জন সংখ্যালঘুকে। পরে একে একে রামদিয়া, পোয়াইল, ময়েনদিয়া, শ্রীনগর ও রাজাপুর গ্রামের আরো ২০ জনকে হত্যা করা হয়। আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয় তহাদের ঘরবাড়ীসহ ময়েনদিয়াবাজার। নারকীয় এ গণহত্যার শিকারদের স্মৃতি ধরে রাখতে বেসরকারীভাবে স্থানীয়দের উদ্যোগে হাসামদিয়ায় শাহ-জাফর টেকনিক্যাল কলেজের মাঠে নিহতদের স্মরণে নাম ফলক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সরকারীভাবে আজো নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, পাক-বাহিনীর আসার সংবাদে বন-জঙ্গলে পালিয়েও রক্ষা করা যায়নি প্রাণ। চোখের সামনে স্বজনের হত্যার দৃশ্য দেখের প্রতিবাদের সাহস ছিলনা কারো।
তারা বলেন, কারো স্বামী, কারো ভাই, কারো দেবরসহ স্বজনদের হত্যার পর থেকেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে পরিবারের অন্য সদস্যদের। সহযোগীতা বলতে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধুর পাঠানো এক হাজার টাকাই পেয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
সেদিনে কথা মনে করে আজো শিউরে ওঠেন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সদস্যরা। তাদের দাবী এত কিছুর পরেও আজো মেলেনি শহীদ পরিবারের স্বিকৃতি।
সমাজকর্মীদের মতে, গণহত্যার শিকার অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর দাবী স্থানীয় সমাজকর্মীদের। অন্তত একজন করে হলেও ওই সকল পািরবারের সদস্যদের চাকুরী দেয়ার আহ্বান তাদের।
স্থানীয়রা জানান, হাসামদিয়া এলাকায় গণহত্যার বিভিষিকা দেখে অনেক যুবকই পরে দেশ রক্ষায় যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
বোয়ালমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সহকারী ইউনিট কমান্ড সাংগঠনিক মুক্তিযোদ্ধা, কে,এম জহুরুল হক বলেন, উপজেলার সর্ব বৃহৎ এ গণহত্যার শিকারদের স্মৃতি রক্ষায় সরকারীভাবে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযোদ্ধারা গণহত্যার শিকারদের শহীদের মর্যাদাদানসহ তাদের স্মৃতি রক্ষার দাবী জানিয়েছে।
তবে সচেতন মহলের প্রত্যাশা, সরকারীভাবে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও ঘটনার বিভিষিকাময় বিবরণ লিপিবদ্ধ করা হলে তা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জিবিত হবে পরবর্তী প্রজন্ম। #